শরীয়তপুর জেলার উপজেলাসমূহের নাম ও পটভূমি
ক্র. নং | উপজেলার নাম | উপজেলার পটভূমি |
১ | শরীয়তপুর সদর | শরীয়তপুর সদর উপজেলার পূর্ব নাম পালং। পালং একটি অতি পুরাতন নাম। কত বৎসর পূর্বে পালং থানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বা কোন প্রসংগে এ থানার নামকরন করা হয়েছে তার কোন সঠিক তথ্য নেই। তবে পরবর্তীতে ১৯৭৭ সালে মহকুমা স্থাপনের মাধ্যমে পালং এর নাম পরিবর্তন করে শরীয়তপুর সদর রাখা হয়। প্রখ্যাত ইসলামি সংস্কারবাদী ধর্মীয় নেতা হাজী শরীয়তউল্লাহর নামানুসারে শরীয়তপুর নামকরন করা হয়। এর উত্তরে নড়িয়া ও জাজিরা, পূর্বে ভেদরগঞ্জ ও ডামুড্যা, দক্ষিনে কালকিনি ও ডামুড্যা এবং পশ্চিমে মাদারীপুর সদর উপজেলা। |
২ | জাজিরা | শরীয়তপুর জেলার অন্যতম জাজিরা উপজেলা জেলা সদর হতে ১২ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত। বিশ্ব মানচিত্রের ২৩.১৬ ও ২৩.২৭ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০.১৩ হতে ৯০.২৬ পূর্ব দ্রাঘিমা রেখার মধ্যে জাজিরা অবস্থিত । থানাটির উত্তরে মুন্সিগঞ্জ, দক্ষিনে শরীয়তপুর সদর, পূর্বে নড়িয়া এবং পশ্চিমে শিবচর থানা। জাজিরা পদ্মা নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা। প্রতি বছরই নদী ভাঙ্গনের কারণে উপজেলার অংশ সংকুচিত হচ্ছে এবং বাসত্মভিটাহীন লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। শরীয়তপুরের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর জাজিরা উপজেলার উপর দিয়ে শরীয়তপুর মাঝির ঘাট-সড়ক ব্যবহার পূর্বক পদ্মা নদী পার হয়ে ঢাকা যাতায়াত করে। জাজিরা নামকরণ সম্পর্কে সুস্পস্ট কোন তথ্য জানা নেই । এটি একটি আরবী শব্দ, যার অর্থ দ্বীপ। এ শব্দ হতেই পুরানো যুগের কোন মুসলিম নেতা এর নাম লেখেছিলেন মর্মে কথিত আছে। ১৯৮৩ সালের ২৪ মার্চ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুনসি আবদুর রউফ বীর শ্রেষ্ট এর মাতা মোসাম্মদ মফদুন্নিসা জাজিরা উপজেলার উদ্ধোধন করেন। |
৩ | নড়িয়া | শরীয়তপুর জেলার ০৬টি উপজেলার মধ্যে নড়িয়া অন্যতম প্রখ্যাত উপজেলা । জেলা শহর হতে প্রায় ১৪ কিঃমিঃ উত্তর পূর্বে নড়িয়া অবস্থিত । ভৌগলিকভাবে ২৩.১৪ ডিগ্রী হতে ২৩.২৫র্ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০.১৮ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে এর অবস্থান । উপজেলাটির উত্তরে পদ্মা নদী ও মুন্সিগঞ্জ জেলা দক্ষিনে ভেদরগঞ্জ ও শরীয়তপুর সদর উপজেলা ও জাজিরা উপজেলা দ্বারা বেষ্টিত। নড়িয়া প্রথমে থানার রুপনেয় ১৯৩০সালে । ১৯৮৩ সালের ১লা আগষ্ট নড়িয়া উপজেলায় রুপান্তরিত হয় । উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালিন খাদ্য মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল এজি মাহমুদ । নড়িয়া উপজেলার নামকরণ সম্পর্কে কোন সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি । তবে কথিত আছে নড়িয়া নামক এক বিরাট মৌজার নামানুসারেই এর নামকরণ নড়িয়া করা হয় । এখানকার জনসাধারণের প্রধান জীবিকা কৃষি হলেও ব্যবসা, সরকারী বেসরকারী চাকুরী, কামার, কুমার, কুটির শিল্প সম্প্রদায়ের বহু লোক এখানে বাস করে । এছাড়া এ উপজেলায় প্রায় ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) লোক ইতালী, মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশ্বের নানা দেশে কর্মরত আছেন। প্রচুর রেমিটেন্স দেশে প্রেরণ করে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। ইতিহাস খ্যাত বারভূঁইয়াদের দু’প্রধান ভূঁইয়া চাঁদরায়, কেদার রায়ের স্মৃতি বিজারিত কেদারপুর গ্রামে প্রাচীন নিদর্শন আছে। এছাড়া নড়িয়ার সন্দেশ বিখ্যাত । এ উপজেলার উন্নয়নের রূপকার হলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী, ৫(পাঁচ) বার নির্বাচিত এম,পি, জনপ্রিয় জন প্রতিনিধি কর্ণেল (অবঃ) শওকত আলী, এমপি ও মাননীয় ডেপুটি স্পীকার, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ । বহু বরেণ্য ব্যক্তিত্ব এ উপজেলায় জন্ম গ্রহণ করেন । তাঁদের মধ্যে প্রাক্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক মন্ত্রী জনাব গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের এম, এন, এ, ভাষা সৈনিক ডঃ গোলাম মাওলা, বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত গীতি কবি অতুলপ্রসাদ সেন বিশদ, বিখ্যাত ফুটবলার গোষ্ঠপাল, সাহিত্যিক আবু ইসহাক, বাংলাদেশ সরকারের, কেবিনেট সেক্রেটারী জনাব আতাউল হক, বর্তমানে বানিজ্য সচিব জনাব ফিরোজ আহমেদ, বর্তমান জর্ডানের রাষ্ট্রদুত জনাব গোলাম মোহাম্মদ, অতিরিক্ত সচিব জনাব একেএম আমির হোসেন, অতিরিক্তসচিব জনাব আবু বক্কর সিদ্দিক, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ নাজির আহমদ, স্বাধীনতা সংগ্রামী পুলিন বিহারী দাস, জ্যোতির্বিদ মদন মোহন বিদ্যাভূষন উল্লেখযোগ্য। |
৪ | ভেদরগঞ্জ | ভেদরগঞ্জ থানা ও সখিপুর থানা নিয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা গঠিত। উত্তরে-নড়িয়া উপজেলার অংশ বিশেষ ও পদ্মা নদী, পূর্বে মেঘন নদী, পশ্চিমে শরীয়তপুর নরিয়া উপজেলা,দক্ষিনে-ডামুড্যা উপজেলা অবস্থিত। ভেদরগঞ্জ থানাঃ ভেদরগঞ্জ পৌরসভাসহ ৪টি ইউনিয়ন যথাঃ রামভদ্রপুর, মহিষার, ছয়গাঁও ও নারায়নপুর ইউনিয়ন নিয়ে এবং সখিপুর থানা ৯টি ইউনিয়ন যথাঃ ডি.এম. খালী, চরকুমারিয়া, সখিপুর, উত্তর তারাবুনিয়া, কাঁচিকাটা, চরভাগা, আরশীনগর দক্ষিণ তারাবুনিয়া ও চরসেন্সাস ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব বিক্রমপুর পরগনার জমিদার সৈয়দ ভেদার উদ্দিন শাহ তাঁর জমিদারীর অংশ বিশেষ হিসেবে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ এই এলাকা সফরে আসেন। এলাকার প্রজাসাধারণের আইন-শৃংখলা ও জন নিরাপত্তার স্বার্থে ব্রিটিশ সরকারের কাছে একটি থানা স্থাপনের দাবী জানান। ছয়গাঁওসহ ভেদরগঞ্জ এলাকার প্রায় স্থানেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন জোরদার ছিল। জমিদারে দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন দমনের প্রয়াসে ব্রিটিশ সরকার ভেদর উদ্দিনের নামানুসারে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে ভেদরগঞ্জ থানা ঘোষণা করেন। কালের প্রভাবে প্রশাসনিক চাহিদার আলোকে ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৩ সন ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্থাপিত হয়। অত্র এলাকার মানুষের সুখ দুঃখের সাথিও গর্ভ পদ্মা ও মেঘনা নদীর তীরে ভেদরগঞ্জ অবস্থিত। পদ্মা নদী সাবেক বিক্রমপুর পরগনা থেকে ভেদরগঞ্জকে বিচ্ছিন্ন করে। ভেদরগঞ্জ এর উত্তরে-নড়িয়া উপজেলার অংশ বিশেষ ও পদ্মা নদী, পূর্বে মেঘনা নদী, পশ্চিমে শরীয়তপুর সওর উপজেলা দক্ষিনে-ডামুড্যা উপজেলা অবস্থিত। |
৫ | ডামুড্যা | এক সময়ে তৎকালীন মাদারীপুর মহকুমার বিখ্যাত বাংলা কবি নবীন চন্দ্র সেন মহকুমা প্রশাসক ছিলেন। নবীন চন্দ্র সেনের আমন্ত্রণে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর একদা মাদারীপুর সফরে এসেছিলেন এবং মাদারীপুর হতে নবীন চন্দ্র সেনের সাথে বর্তমান ডামুড্যা সফরেও আসেন। ডামুড্যার পূর্ব পাশের নদী দেখে বলেছিলেন এই নদী দামোদর নদীর মত। দামোদর ভারতের একটি বিখ্যাত নদী। এই নদী সাঁতার দিয়ে বিদ্যাসাগর মায়ের সাথে দেখা করতে যেতেন। কারণ বিদ্যাসাগরের খেঁয়ার পয়সার অভাবে সাঁতার কেটে মাকে দেখতে যেতে হতো। এই কথা শুনে মহকুমা প্রশাসক নবীন চন্দ্র সেন বিদ্যাসাগরের সম্মানে এই এলাকার নাম রাখেন দামোদর। ক্রমে ক্রমে এলাকাটি ডামুড্যা হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। উত্তর দিকে - ভেদরগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণ দিকে - গোসাইরহাট উপজেলা, পূর্ব দিকে -গোসাইরহাট উপজেলা, পশ্চিমে - শরীয়তপুর সদর উপজেলা অবস্থিত। |
৬ | গোসাইরহাট | বাংলার শেষ নবাব সিরাজ উদ্দৌলার পতন মুহূর্তে যখন ইংরেজদের আগমন প্রায় নিশ্চিত কথিত আছে যে, তখন বর্তমান গোসাইরহাট থানার মূলগাঁও গ্রামটির নিকট ব্রহ্মনন্দ গিরি নামে এক সাধু বাস করতেন। লোকে তাকে ‘গোসাই’ নামে ডাকতেন। সহানীয় অনেকের ধারণা এ গোসাই হতেই গোসাইরহাট নামকরণ। শরীয়তপুর জেলার সর্বদক্ষিণে গোসাইরহাট উপজেলা অবসিহত। তৎকালে ৭টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল এ গোসাইরহাট উপজেলা। বর্তমানে ৮টি ইউনিয়ন এ গোসাইরহাট উপজেলার অন্তর্ভুক্ত। এ উপজেলার উত্তরে ডামুড্যা ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণে বরিশালের হিজলা-মুলাদী উপজেলা, পূর্বে চাঁদপুরের হাইমচর এবং পশ্চিমে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা। |
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস