বড় গুইসাপ বা রামগদি (বৈজ্ঞানিক নাম: Varanus salvator)
এরা এক প্রকার বড় জাতের গিরগিটি। সর্বোচ্চ সাড়ে ১০ ফুটের মতো লম্বা হতে পারে এরা। তবে গড় দৈর্ঘ্য ৪ ফুট ১১ ইঞ্চির মতো এবং ওজন ২৫ কেজির মতো হতে পারে। তবে বেশির ভাগেরই ওজন এর অর্ধেক। বড় গুইসাপ দেখতে পাওয়া যায় ভারত, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, ইন্দোচীনে। এরা ভালো সাতারু। পৃথিবীতে কমোডো ড্রাগন হচ্ছে সবচেয়ে বড় গুইসাপ প্রজাতি। কিছু লোক বিচিত্র এই প্রাণী ও এদের বসত এলাকা বিলীন করতে উঠে পড়ে লেগেছে। তারা চামড়ার জন্য এদের ধরতে আসে।বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। শরীয়তপুরে প্রাণিটির সর্বত্রই বিচরণ রয়েছে।
সোনাগুই (বৈজ্ঞানিক নামঃ Varanus flavescens )
এরা নির্বিষ। বাংলাদেশে তিন ধরনের গুই সাপ দেখা যায়। যার কোনোটাই বিষাক্ত নয়। তবে এদের লালায় যে প্রচুর ব্যাক্টেরিয়া থাকে যা মাংস পচাতে সাহায্য করে। এরা ভীতু, মোটেও আক্রমণাত্নক নয়। এরা থুতু ছেটায় না৷ কোনঠাসা না হলে কোনরকম আক্রমণের চেষ্টা করে না। তবে সন্তানকে রক্ষা করার প্রয়োজনে আক্রমণাত্নক হতে পারে। বিষধর সাপ ও ক্ষতিকর পোকামাকড় এদের প্রিয় খাদ্য। ময়লা আবর্জনা, মৃত প্রাণী খেয়ে আমাদের উপকার করে। অন্যান্য খাদ্যের মধ্যে রয়েছে- ছোটসাপ, ব্যাঙ, ইদুর, মাছ, কেঁচো, শামুক, কাঁকড়া ইত্যাদি৷ সুযোগ পেলে হাঁস-মুরগির ছানা ও ডিমে হানা দেয়৷ গুইসাপ খুবই নিরীহ প্রাণী৷ মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়৷ তারা অতি উপকারী প্রাণী৷ বিষধর সাপ ও ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে আমাদের উপকার করে৷ ক্ষতিকর পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করে ফসলের ফলন বৃদ্ধি করে৷ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গুইসাপের ভূমিকা অতূলনীয়৷ এরা খাদ্যশৃঙ্খলে বিশেষ ভূমিকা রাখে৷ এদের সংখ্যা হ্রাস পেলে প্রধান খাদ্য পোকামাকড়ের সংখ্যা বেড়ে যাবে, ইদুরের উৎপাত বেড়ে যাবে, অনুকূল পরিবেশ হবে বিষাক্ত সাপের৷ যা পরিবেশ ও মানুষের জন্য মোটেও সুখকর নয়৷ দয়াকরে এদের দেখলে মারবেন না। কারন এরা বিষাক্ত সাপ, ইদুর খেয়ে পরিবেশ সুন্দর রাখে। শরীয়তপুরে প্রাণীটির বিচরণ ব্যাপক।
বড় কুবো (বৈজ্ঞানিক নাম: Centropus sinensis)
কানা-কুয়া, কানাকোকা বা কুক্কাল Cuculidae (কুকুলিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Centropus (সেন্ট্রোপাস) গণের অন্তর্ভুক্ত অতি পরিচিত এক প্রজাতির পাখি। পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়। বড় কুবো বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ গজালের মত নখরওয়ালা পা বিশিষ্ট চীনা পাখি (গ্রিক: kentron = গজালের মত নখ, pous = পা; লাতিন: sinensis = চীনের)।সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এরা বিস্তৃত। প্রায় ৭৯ লক্ষ ৪০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে, আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।
ডাহুক (বৈজ্ঞানিক নাম: Amaurornis phoenicurus)
ডাইক, পানপায়রা বা ধলাবুক ডাহুক Rallidae (রেলিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত Amaurornis (আমুরর্নিস) গণের অন্তর্গত মাঝারি আকৃতির একটি পাখি। পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়।এটি সাধারণত মাঠের ভিতরে ডিম পারে। শরীয়তপুরে পাখিটিকে নদী, নালা, খাল, বিলের ধারে বিচরণ করতে দেখা যায়।
কাঠ শালিক (বৈজ্ঞানিক নাম : Sturnus malabaricus)
এটি কাঠ শালিক। কাঠ শালিকের ইংরেজি নাম Chestnut-tailed Starling। এদের বিচরণ অপেক্ষাকৃত হালকা বন-বনানীতে। আবার শহরেও দেখতে পাওয়া যায়। তবে ভূমিতে খুব একটা বিচরণ করে না। গ্রামে এখনো দল বেধে উড়তে দেখা যায়। গায়ের বর্ণ অতি উজ্জ্বল না হলেও দেখতে ভালোই লাগে। দল বেঁধে অথবা জোড়ায়-জোড়ায় বিচরণ করে। আমাদের বন জঙ্গল ধ্বংস করার প্রবণতায় এদরকে ঠাঁই দিয়েছে শহরেও। কাঠ শালিক লম্বায় ২০-২৩ সেন্টিমিটার। পিঠ উজ্জ্বল বাদামি ধূসর। বুক গাঢ় লালচে বাদামি। গলা ও পায়ের দু’পাশ ফিকে লাল। লেজের বাইরের পালকগুলো লালচে বাদামি। চোখ সাদা থেকে হালকা নীলাভ, ঠোঁটের গোড়া কালচে নীল, আগা উজ্জ্বল হলুদ।প্রজনন সময় বসন্ত থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত। বর্ষা মৌসুমে গাছের প্রাকৃতিক ফোকর এবং দালানের গোলাকার বা ছোট ভেন্টিলেটরে বাসা বানায়। বাসা বাঁধার আগে পছন্দমতো জায়গা খুঁজে বেড়ায়। বাসা বাঁধতে সময় লাগে ৫-৭ দিন। মেয়ে পাখি ডিম পাড়ে ৩-৫টি। ডিমের রঙ ফিকে নীল। ডিম ফুটে বাচ্চা হতে সময় লাগে ১৫-২১ দিন।
পাতি জলমুরগি (বৈজ্ঞানিক নাম : Gallinula chloropus )
কমন জলমুরগি বা পাতি জলমুরগি (Gallinula chloropus) (জলা চিকেন নামেও এরা পরিচিত হল রেলিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রজাতি।এই জলমুরগিরা বিভিন্ন লতাপাতাযুক্ত জলাভুমি, পুকুর, খাল ইত্যাদি জায়গায় এদের দেখতে পাওয়া যায়।এগুলো ছাড়া এই প্রজাতি রেলিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য প্রজাতির মতোই। শুধুমাত্র ইউরেশীয় কুট প্রজাতিটি এদের থেকে একটু আলাদা।
মেছোবাঘ (বৈজ্ঞানিক নাম:Prionailurus viverrinus)
মেছোবাঘ, বাঘরোল বা মেছো বিড়াল মাঝারি আকারের বিড়ালগোত্রীয় একধরনের স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী। বিগত কয়েক দশকে বাঘরোলের সংখ্যা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে। জনবসতি স্থাপন, কৃষিজমিতে রূপান্তর ও অন্যান্য কারণে বাঘরোলের আবাসস্থল জলাভূমিগুলো দিন দিন সংকুচিত ও হ্রাস পাওয়াই এর মূল কারণ। তাই আইইউসিএন ২০০৮ সালে মেছোবাঘকে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করে। বাংলাদেশের ১৯৭৪ ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। বাঘরোল সাধারণত নদীর ধারে, পাহাড়ি ছড়া এবং জলাভূমিতে বাস করে। এরা সাঁতারে পারদর্শী হওয়ায় এ ধরনের পরিবেশে সহজেই খাপ খাওয়াতে পারে। এদের গায়ে ছোপ ছোপ চিহ্ন থাকার জন্য চিতাবাঘ বলেও ভুল করা হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এটিকে সেই রাজ্যের 'জাতীয় প্রাণী' তকমা দেওয়া হয়েছে এবং এই রাজ্য বর্তমানে বাঘরোল সংরক্ষণে ও তাদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে আশার আলো দেখিয়েছে।
জলপিপি (বৈজ্ঞানিক নাম: Metopidius indicus)
স্থানীয় প্রজাতির পাখি। সুলভ দর্শন। এক সময় গ্রামের দিঘি কিংবা বিল-ঝিলে এদের প্রচুর দেখা যেত। শিকারিদের অত্যাচারে গ্রামীণ জনপদ থেকে বিতাড়িত হয়ে এরা এখন হাওর-বাঁওড়ে আশ্রয় নিয়েছে। জানা যায়, সত্তর দশকেও ঢাকার চারপাশের জলাশয়ে এদের প্রচুর বিচরণ ছিল। বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার জলাশয়ে ছোট ছোট দলে দেখা যায়।ডাহুকের মতো গড়ন হলেও বেশ পার্থক্য রয়েছে চেহারায়। পা তুলনামূলক লম্বা, পায়ের আঙুল অস্বাভাবিক লম্বা। অনেকটা মাকড়সার পায়ের মতো দেখায়। যার ফলে এরা জলাশয়ের ভাসমান পাতার ওপর ভর দিয়ে দ্রুত বেগে দৌড়াতে পারে, যা অন্য প্রজাতির জলচর পাখির পক্ষে সম্ভব নয়। সে তুলনায় খুব বেশি উড়তে পারে না। ওড়ার সময় পা ঝুলিয়ে এবং গলা সামনে বাড়িয়ে ওড়ে। বেশিরভাগ জোড়ায় জোড়ায় বিচরণ করে। মিলন ঋতুতে ডাকাডাকি করে বেশি। প্রহরে প্রহরে ‘পি-পি-পি-পি-পি-’ সুরে ডেকে ওঠে। তাই এদের নামকরণের শেষ অক্ষরের সঙ্গে নিজস্ব সুরের ‘পি-পি’ শব্দটি যোগ হয়েছে। অনেক সময় ‘সিইক-সিইক’ সুরেও ডাকে। ডাহুকের মতো এদের সুরে তাল-লয় নেই। খানিকটা কর্কশ। পাখিটা দেশে অধিক পরিচিত নয়, যেমনটি ডাহুক। স্থানীয় লোকের কাছে ‘পিপি’ পাখি নামে পরিচিত এরা। শরীয়তপুরকে এই পাখির অভয়ারণ্য বলা যায়, কেননা প্রচুর জলপিপি পাখি পাওয়া যায় শরীয়তপুরে।
বেগুনি মৌটুসী (বৈজ্ঞানিক নাম: Cinnyris asiaticus)
বাংলাদেশের পাখির তালিকায় Cinnyris এই গণে পৃথিবীতে ৫০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে তার ২টি প্রজাতি। সেগুলো হলো ১. বেগুনি মৌটুসি, ২. জলপাইপিঠ মৌটুসি। আমাদের আলোচ্য প্রজাতিটির নাম বেগুনি মৌটুসি। বাংলাদেশের পাখির মধ্যে বেগুনি মৌটুসি কালচে বাদামি ঠোঁট ও কালো পায়ের ছোট গায়ক পাখি। বেগুনি মৌটুসি মুক্ত পাতাঝরা বন, আবাদি জমি, বাগান ও আবাসভূমিতে বিচরণ করে। বেগুনি মৌটুসি বাংলাদেশের সুলভ আবাসিক পাখি। শরীয়তপুর জেলার এই পাখির দেখা মেলে। সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে এদের বিচরণ করতে দেখা যায়।
সিঁদুরে-সাহেলি (বৈজ্ঞানিক নাম: Pericrocotus flammeus)
স্ত্রী স্কারলেট পুরুষ স্কারলেট
এর ইংরেজি নাম স্কারলেট মিনিভেট (Scarlet Minivet)। বাংলায় একে সিঁদুরে সাহেলি ছাড়াও লাল সাতসাহেলি, লালপরি সায়েলি নামেও ডাকা হয়। শহরে বসবাসকারী পাখিদের তালিকায় এরা পড়ে না কিন্তু শরীয়তপুরে আজও এর দেখা মেলে।
ছেলে পাখিটি টুকটুকে লাল এবং মেয়েটি হালকা হলুদ এমন চমৎকার রঙের সংমিশ্রণ খুব কম পাখিদের মধ্যেই রয়েছে। এই প্রজাতির পাখিদের শুধুমাত্র পুরুষরা গাঢ় লাল হয়ে থাকে। স্ত্রীদের গায়ের রঙ হালকা হলুদ। পুরুষ পাখির মাথার রঙ কালো এবং পিঠের পালকে রয়েছে কালো রঙের ছোপ, যা তাকে দিয়েছে মোহনীয় রূপ। কিন্তু স্কারলেট মিনিভেট এর স্ত্রী বা পুরুষ দু প্রজাতিই চমৎকার রঙের সৌন্দর্যে রাঙা।এরা আবাসিক পাখি। অর্থাৎ আমাদের দেশেই বসবাস করে। সচরাচর জোড়ায় বা ঝাঁকে দেখা যায়। এরা ছোট আকারের পাখি। এদের দৈর্ঘ্য ২২ সেমি. এবং ওজন মাত্র ২৬ গ্রাম। প্রতি বৈশাখ জৈষ্ঠ্যে এরা ছানা তুলে। আমাদের দেশীয় গাছের গায়ে চরে বেড়ানো ছোট ছোট পোকামাকড় খায়। সিলেট, চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল, রংপুর, যশোর, মাগুরা, খুলনা এইসব প্রাকৃতিক বন-জঙ্গলে এদের প্রায়ই দেখা যায়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, থাইল্যান্ড, মায়ানমার এইসব দেশে রয়েছে এদের বৈশ্বিক বিস্তৃতি।
খয়েরি হাঁড়িচাচা (বৈজ্ঞানিক নাম: Dendrocitta vagabunda)
হাঁড়িচাচা Corvidae (কর্ভিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Dendrocitta (ডেন্ড্রোসিট্টা) গণের এক প্রজাতির লম্বা লেজের পাখি। খয়েরি হাঁড়িচাচা বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ "ভবঘুরে গাছ দোয়েল" । সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস। প্রায় ৪৩ লাখ ৬০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। বাংলাদেশে আঞ্চলিক ভাবে পাখিটি তাউড়া, তাড়ে, লেজঝোলা, ঢেঁকিল্যাজা, কুটুম পাখি ইত্যাদি নামে পরিচিত। বিভিন্ন দেশ জুড়ে খয়েরি হাঁড়িচাচার বিচরণ। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া এই প্রজাতিটির মূল আবাসস্থল।
বড় বসন্ত বৌরি (বৈজ্ঞানিক নাম: Psilopogon asiaticus)
বড় বসন্ত বাউরি, বড় বসন্ত বাওড়ী বা ধনিয়া পাখি মেগালাইমিডি (Megalaimidae) পরিবার বা গোত্রের অন্তর্গত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এক প্রজাতির ফলাহারী দৃষ্টিনন্দন পাখি। বড় বসন্ত বৌরির মুখাবয়ব, গলা ও বুকের উপরের দিক দৃষ্টি-আকর্ষী গাঢ় আসমানী নীল- যার জন্য প্রজাতিটির ইংরেজি নাম Blue-throated Barbet। বাকি সারা দেহ কলাপাতা-সবুজ। লাল মাথার উপরে চূড়া বরাবর হলুদ ও কালো পরপর দুটি পট্টি। বুকের দুইপাশে একটি করে সিঁদুরে লাল ছোপ। ভ্রু নীলাভ যার উপরে কালো ডোরা, যেটি মাথার কালো পট্টির সাথে যুক্ত হয়েছে। ভারি ঠোঁট; ঠোঁটের সামনের অর্ধেক কালো, বাকি অংশ হয় নীলাভ নাহয় নীলের উপরে হলুদের আভাযুক্ত। পা ধূসর বা পাটকিলে বর্ণের। চোখের তারা লালচে। চোখের চারিদিকে লাল পট্টিবিশিষ্ট চামড়া দেখা যায়। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম, কেবল কমবয়েসীগুলোর চেহারায় বয়স্কদের লাল-নীলের চাকচিক্য থাকে না। দৈর্ঘ্যে কমবেশি ২৫ সেন্টিমিটার। নরম ফল বিশেষ করে বটের ফল, কদম, দেবদারু, ডেউয়া, আম, কলা, তেলাকুচা, কিছু পোকামাকড় ও শুঁয়োপোকা খেতে পছন্দ করে।
মেঘহও মাছরাঙা (বৈজ্ঞানিক নাম: Pelargopsis capensis)
মেঘহও মাছরাঙা গণের এক প্রজাতির বিশাল আকারের মাছরাঙা। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৪২ লাখ ৬০ হাজার বর্গকিলোমিটার জায়গা জুড়ে এদের আবাস। বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমে যাচ্ছে, তবে এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছেনি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। পৃথিবীতে এদের মোট সংখ্যা সম্বন্ধে তেমন একটা জানা যায়নি, তবে বাংলাদেশে ব্যাপক হারে জলাশয় নির্মূলের কারণে এখন আর এই দৃষ্টিনন্দন বর্ণিল পাখির সচরাচর দেখা মেলে না। আমাদের দেশে অনেক প্রজাতির ‘মাছরাঙা’ পাখি রয়েছে। সংখ্যার হিসেবে গুনলে প্রায় এক ডজন তো হবেই। এ সমস্তগুলোর আপন আপন সৌন্দর্যমুখর। এরই মাঝে সৌন্দর্যের ভেতর আরো এক সৌন্দর্য টকটকে লাল চঞ্চু (ঠোঁট) আর নীল পিঠ ও ডানার পাখি মেঘহও মাছরাঙা।
তিনডোরা কাঠবিড়ালি (বৈজ্ঞানিক নাম: Funambulus palmarum)
তিনডোরা কাঠবিড়ালি (বৈজ্ঞানিক নাম: Funambulus palmarum)হচ্ছে কাঠবিড়ালী পরিবারের একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। এরা দীর্ঘ ও ঝোপযুক্ত লেজ, ধারালো নখর এবং বড় কানবিশিষ্ট কাঠবিড়ালি। এরা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বৃষ্টিপ্রধান বন থেকে আর্কটিক তুন্দ্রা অঞ্চলে বিচরণ করে। এটি গাছের চূড়া থেকে ভূনিম্নস্থ সুড়ঙ্গেও থাকতে পারে। এদের পিঠের ওপর তিনটি সাদা ডোরা দাগ আছে। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের তফসিল-১ অনুযায়ী এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত। সুন্দরবন ছাড়া দেশের উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকার অধিকাংশ জেলায়ই এদের দেখা যায়। রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, শরীয়তপুরসহ আরও অনেক জেলায় প্রায়ই এদের চোখে পড়ে। এরা একাকী বা জোড়ায় চলে। প্রধানত ফল, বীজ, বাদাম, বাকল, পোকামাকড় ও খেজুরের রস খায়। এদের চঞ্চল চলাফেরা খুবই দৃষ্টিনন্দন।
নীললেজ সুঁইচোরা (বৈজ্ঞানিক নাম: Merops philippinus )
নীললেজ সুঁইচোরা একটি নিকটস্থ চড়াই-জাতীয় পাখি । এটি দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে যেখানে অনেক পরিযায়ী পাখি দেখা যায়।নীললেজ সুঁইচোরা খুবই দৃষ্টিনন্দন পাখি। বাংলাদেশে মোট ৪ ধরনের সুঁইচোরা পাওয়া যায়। এরমধ্যে এই নীললেজ সুঁইচোরা গ্রীষ্মের শুরুতে আমাদের দেশে আসে, এখানে এসে নদীর পাড়ে বালুর মধ্যে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। এদের সুন্দর ছুঁচালো নীল লেজের জন্য এরকম নামকরণ করা হয়েছে। এই পাখির সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে উড়ে উড়ে এদের ফড়িং, মোমাছি ধরতে দেখা, খুবই পারদর্শী এরা এই কাজে। নীললেজ সুঁইচোরা সাধারণত জোড়ায় ও মাঝারি আকারে ঝাঁক বেঁধে চলাফেরা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এরা নদীর পানির সামান্য উপর দিয়ে খুব ঘুরাফেরা করে। বাকি সময় গাছের ডালে বসে থাকে। মাঝে মাঝে নদীর পানিতে গা ভিজিয়ে দেহের পালক চুলকাতে খুব পছন্দ করে। এরা গাছের উঁচু ডালে শিকারের জন্য ওঁৎ পেতে থাকে। শিকার পাওয়া মাত্রই বিদ্যুৎ গতিতে ছোঁ মেরে খাবার ধরে ফেলে। উড়ন্ত পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ, ফড়িং, বোলতা, মৌমাছি, মথ ও গুবরে পোকা এদের পছন্দনীয় খাবারের তালিকায় আছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস